Ticker

6/recent/ticker-posts

AD

custom_html_banner1 custom_html_banner2 custom_html_banner3 custom_html_banner4

সুড়ঙ্গে আটকা কর্মীদের ভয়ংকর ৭ ঘণ্টা

সুড়ঙ্গে আটকা কর্মীদের ভয়ংকর ৭ ঘণ্টা 

সুড়ঙ্গে আটকা কর্মীরা

ভারতের  হিমবাহ ধসের পর একটি সুড়ঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে ছিলেন বসন্ত বাহাদুর ও আরও ১১ জন। পানির প্রবল স্রোত থেকে বাঁচতে সুড়ঙ্গের ছাদে লোহার রড ধরে ঝুলেছিলেন তাঁরা। উদ্ধারকারীদের জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনছিলেন সবাই।


চারপাশে তখন বন্যার পানি। আবর্জনা আর কাদায় ভরা সবকিছু। তপোবন বিষ্ণুগদ জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত দুটি সুড়ঙ্গের মুখ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল পানি আর আবর্জনায়। গত রোববার ছোট একটি সুড়ঙ্গে আটকা পড়েন বসন্ত বাহাদুর ও অন্যরা। সেখান থেকে তাঁদের টেনে বের করে আনা হয়। বড় আরেকটি সুড়ঙ্গে আটকা ৩৫ জনকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। ওই সুড়ঙ্গটির দৈর্ঘ্য ৮ কিলোমিটারের বেশি।


সুড়ঙ্গটি থেকে যাঁদের উদ্ধার করা হয়েছে তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছে বিবিসি। ভয়ংকর সেই কয়েক ঘণ্টার কথা বিবিসিকে জানিয়েছেন তাঁরা।


‘জীবনের সবচেয়ে কঠিন সেই সাত ঘণ্টা’

যখন প্রবল বন্যা হয়, তখন সুড়ঙ্গটির ৯০০ ফুট ভেতরে কাজ করছিলেন বসন্ত বাহাদুর ও অন্যরা। প্রথমে তাঁরা ভেবেছিলেন গ্যাস সিলিন্ডারে বিস্ফোরণ হয়েছে। সুড়ঙ্গ থেকে বের হলে বিদ্যুতায়িত হতে পারেন ভেবে ভেতরেই থাকার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁরা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হতে দেখেন চারপাশ। প্রচণ্ড শব্দে কানে তালা লেগে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়।

বসন্ত বাহাদুর বলেন, অন্ধকার সুড়ঙ্গে হঠাৎ প্রবল জলরাশি ঢুকে পড়ে। পানি থেকে বাঁচতে আতঙ্কিত শ্রমিকেরা সবাই খননকাজে ব্যবহৃত জেসিবি যন্ত্রের ওপর উঠে পড়েন। বসন্ত বলেন, ‘জীবনের সবচেয়ে কঠিন সাত ঘণ্টা ছিল সময়টা। তবে আমরা আশা ছাড়িনি। আমরা একে অন্যকে সাহস দিচ্ছিলাম।’সৌভাগ্যবশত মোবাইল সঙ্গে ছিল বসন্ত বাহাদুরের। সুড়ঙ্গের ভেতরে মোবাইলের নেটওয়ার্ক ভালো ছিল না। শেষ পর্যন্ত উদ্ধারকারী দলের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়। তারা দড়ি দিয়ে আটকে পড়া বসন্ত ও অন্যদের টেনে তোলে।


‘অপেক্ষা করছিলাম কখন পানি কমবে’

সুড়ঙ্গে থেকে যাঁদের উদ্ধার করা হয়, তাঁদের মধ্যে একজন ভূতাত্ত্বিক শ্রীনিবাস রেড্ডি। তিনি সুড়ঙ্গের ৩৫০ মিটার ভেতরে কাজ করছিলেন। হঠাৎ একজন কর্মী চিৎকার করে সুড়ঙ্গের ভেতর থেকে সবাইকে বাইরে আসতে বলেন। নিকটবর্তী একটি নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় তাঁদের বেরিয়ে আসতে বলেন তিনি। কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গেল। পালিয়ে আসার মতো যথেষ্ট সময় রেড্ডি ও অন্যদের হাতে ছিল না।


রেড্ডি বলেন, ‘পানির তোড় সুড়ঙ্গের ভেতর ঢুকে পড়ে। সুড়ঙ্গের ছাদে থাকা লোহার রড ধরে আমরা ঝুলতে থাকি। অপেক্ষা করছিলাম কখন পানি কমে আসবে।’


যখন পানি বেড়ে যাওয়া বন্ধ হয়, তখন তাঁরা সুড়ঙ্গের মুখের দিকে এগোতে থাকেন। অন্ধকারের মধ্যে হাতড়ে হাতড়ে যেতে হয় তাঁদের। কারণ, পানির স্রোতে সুড়ঙ্গের ভেতরে কোনো বিদ্যুৎ ছিল না। ভেতরে আটকে পড়া অনেক কর্মীর নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম হয়।


রেড্ডি বলেন, ‘আমরা ঠান্ডা পানির মধ্যে ছিলাম। আমার পায়ের পাতা জমে যাচ্ছিল। আমাদের জুতা পানি ও আবর্জনায় ভরে যায়। পায়ের পাতা ফুলে যাচ্ছিল।’ 


রেড্ডি বলেন, ‘ভয় কমাতে ঝুলে থাকা সবাই গান গাইতে শুরু করেন। অনেকে আবৃত্তি করেন। এমনকি শরীরচর্চাও করতে থাকেন।’ তিনি বলেন, ‘আমি সবাইকে সক্রিয় ও সতর্ক রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম। যাতে আমরা বের হওয়ার পথ খুঁজে পাই।’ 

উদ্ধারকাজ


সুড়ঙ্গের ভেতরে থাকা সব কর্মী উদ্ধারকারী দলের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করছিলেন। শেষ পর্যন্ত তাঁরা যোগাযোগ করতে সক্ষম হন। উদ্ধারকারীরা তাঁদের উদ্ধার করেন।

পানি আমাদের ধাক্কা দিচ্ছিল, বিদ্যুৎ চলে গিয়েছিল’

উদ্ধার করার পর বীরেন্দ্র কুমার গৌতম নামে এক ব্যক্তি দুই হাত তুলে উল্লাস করছিলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ভিডিও ভাইরাল হয়। তিনি বলেন, পানি ঢোকার সময় তিনি সুড়ঙ্গের ভেতরে ছিলেন। সে সময় বিদ্যুৎও চলে যায়। কাছাকাছি তাঁরা গোলমালের শব্দ শোনেন। 


অন্ধকার সুড়ঙ্গে পানির উচ্চতা ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছিল। ১৫ মিনিট এই ভয়ংকর অবস্থা চলে। এরপর পানির উচ্চতা বাড়া বন্ধ হয়।

বীরেন্দ্র বিবিসিকে বলেন, পানির তোড় বন্ধ হওয়ার পর সবাইকে বলেছিলাম বিপদ কেটে গেছে। আমি সবাইকে ধৈর্য ধরতে বলি।


সবাই সুড়ঙ্গের লোহার রডগুলো ধরে প্রবেশপথের দিকে এগোতে থাকেন। উদ্ধারকারী দল শ্রমিকদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। শেষ পর্যন্ত উদ্ধারকারীদের সঙ্গে সুড়ঙ্গে আটকা কর্মীদের যোগাযোগ করা সম্ভব হয়।


ভারতের উত্তরাখন্ড রাজ্যের চামোলি জেলার জোশিমঠে দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে নতুন তথ্য জানিয়েছে দেরাদুনভিত্তিক ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব রিমোট সেনসিং (আইআইআরএস)। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার (ইসরো) অন্তর্ভুক্ত আইআইআরএস বলছে, হিমবাহ ধসে নয়, ভূমিধসের কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ১৭০ জন মানুষ এখনো নিখোঁজ।


Post a Comment

0 Comments